বুক রিভিউঃ দা রিচেস্ট ম্যান ইন ব্যাবিলন

লেখকঃ জর্জ এস ক্লাসন 

আজকে আমরা যে বইটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে দা রিচেস্ট ম্যান ইন ব্যাবিলন। টাকা পয়সা নিয়ে আপনি অনেক বই বাজারে পাবেন। তার মধ্যে এই বইটি একটি ক্লাসিক বই।  এখানে প্রাচীন ব্যাবিলন শহরের কিছু দূরদর্শী টাকা কামানোর এবং রিচ হওয়ার যে প্রসেস,  সেই প্রসেস গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

আসলে বইটিকে চ্যাপ্টার অনুযায়ী ভাগ করে বর্ণনা করা মুশকিল। আমি শুধু পয়েন্ট আকারে যা যা পেয়েছি সে জিনিসগুলো নিচে উল্লেখ করলামঃ

টাকা এমন একটা জিনিস যা নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় কার কাছে সে যাবে, কার কাছে সে যাবে না। টাকা আপনার কাছে আসার জন্য আপনার নিজেকে টাকার উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। টাকার পাঁচটি রুল।  নিচে সেই পাঁচটি রুল দেয়া হলোঃ 

  1. আপনি যাই উপার্জন করবেন তা থেকে ১০% টাকা আপনি অবশ্যই সেভ করে রাখবেন 
  2. প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা খরচ করা যাবে না,  অপ্রয়োজনীয় খরচ একদম করা যাবে না 
  3. কিছু পরিমাণ টাকা আপনাকে ইনভেস্ট করতেই হবে এবং সেই ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে খুবই দক্ষতার সাথে। আপনি এমন জায়গায় ইনভেস্ট করবেন না, যে জায়গার সম্পর্কে আপনার খুব ভালো দক্ষতা নেই। আপনার ইনভেস্টমেন্ট কে সুরক্ষা করার দায়িত্ব আপনার নিজেরই। আপনার টাকা যেন লস না হয়, সেই দায়িত্ব আপনার নিজেকেই নিতে হবে। এমন পরিমাণ ইনভেস্ট করবেন না,  যে পরিমাণ সম্পূর্ণ লস হয়ে গেলে আপনি বিপদে পড়ে যান। 
  4.  মানুষজনের মুখে খুব এক্সাইটিং শোনা গেলেও কোনো জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট করার আগে সেই জায়গাটা ভালো মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর আপনি আপনার টাকা ইনভেস্ট করবেন। টাকাকে যদি আপনি সম্মান করতে না পারেন তাহলে টাকা আপনার কাছে থাকবে না । 
  5. ভবিষ্যৎ ইনকামের কথা চিন্তা করে টাকা ইনভেস্ট করতে হবে এবং নিজেকে আরও বেশি উপার্জনক্ষম  করার চেষ্টায় টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। নিজেকে জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। 

 

  • আপনি যদি আপনার স্বপ্ন এবং ইচ্ছা গুলোকে বাস্তবে রূপদান করতে চান তাহলে অবশ্যই টাকার যে রুল উপরে আলোচনা করা হয়েছে সেই রুলগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। উপরের রুলগুলো যে মেনে চলবে টাকার অভাব সে কখনোই অনুভব করবে না। ব্যাবিলন শহরটি একটি সম্পদশালী শহর হিসেবে এজন্যই গড়ে উঠেছিল কারণ এর মানুষরা সম্পদকে এপ্রিশীয়েট এবং সেলিব্রেট করত। 

 

  • আপনার সব সময় একটি কন্সিস্টেন্ট ইনকাম থাকতে হবে, যেটা সব সময় আপনার মানিব্যাগ ভরে রাখবে। সেই ইনকামটা যত কমই হোক না কেনো তাতে কোন সমস্যা নাই।  
  • যার টাকা সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা এবং অভিজ্ঞতা আছে আপনি টাকা বিষয়ক উপদেশ তার কাছ থেকেই নিবেন। যার টাকা বিষয়ক অভিজ্ঞতা খারাপ অথবা অভিজ্ঞতা নেই তার কাছ থেকে যদি আপনি উপদেশ নেন আপনার ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।  
  • বেশিরভাগ মানুষ এজন্যই ভালো পরিমাণ টাকা কামাতে পারে না,  কারণ তারা আসলে ভালো পরিমাণ টাকা কামাতে চায় না।  টাকা কামানোর প্রতি তাদের ডেডিকেশন এবং তাদের চাওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ ঘাটতি থাকে। 
  • কোন খরচটা প্রয়োজনীয় খরচ এবং কোন খরচটা ইচ্ছা করলেই কমানো যায় সে বিষয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত, দরকারি খরচ মানুষের উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গে শুধু বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে। এজন্য কোনটা দরকারি খরচ এবং কোনটা আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী খরচ সেটার একটা সঠিক মাপকাঠি আপনার থাকতে হবে। 
  • আপনি টাকা কামানোর সঙ্গে সঙ্গেই টাকা খরচ করে ফেলবেন না।  কিছুদিন টাকাটা ধরে রাখবেন। খরচ করতে হলে প্রথমে নিজের জন্য খরচ করবেন। এরপর প্রয়োজনের জন্য খরচ করবেন। এরপর ঋণের পরিশোধের  জন্য খরচ করবেন। যে খরচটা আপনার না করলেও চলে সেটা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। 
  • তাদের সঙ্গে বেশি চলার চেষ্টা করুন যারা টাকা সম্পর্কে সুস্থ ধারণা রাখে এবং অসুস্থ ভাবে টাকা খরচ করে না। 
  • মনে রাখবেন প্রত্যেকটা মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উপার্জন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এজন্য আপনি উপার্জনের এমন একটা উপায় তৈরি করবেন যেখানে আপনার কোন কাজ না করলেও আপনার উপার্জন কমে না যায়। 
  • আপনি যদি আপনার পেশাগত দক্ষতা প্রচন্ড রকম বাড়াতে পারেন তাহলে আপনার উপার্জন এমনি এমনি বেড়ে যাবে 
  • মানুষকে সাহায্য করার অনেক উপায় আছে। আপনি আপনার বন্ধুকে এমন ভাবে সাহায্য করতে যাবেন না যেন আপনার সময় আপনার এনার্জি এবং আপনার উপার্জন আপনার বন্ধুকে সাহায্য করার কারণে কমে যায়। 
  • কাউকে টাকা ধার দেয়ার পূর্বে দেখে নিবেন সে ওই পরিমাণ ধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ কিনা। আপনি তখনই ধার দিবেন, যখন আপনি দেখবেন, সে তার আগের ধারগুলোকে শোধ করেছে।
  • নিজের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বাইরে জীবন যাপন করার কোনই প্রয়োজন নেই। লোক দেখানো সামর্থ্য, শুধু অনুশোচনাই বয়ে আনবে। 
  • একজন মুক্ত মানুষ এবং একজন দাস,  দুজনের মাঝে খুব বড় একটি সীমারেখা আছে। একজন মুক্ত মানুষ পৃথিবীকে একটি মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জায়গা হিসেবে দেখে। আরেকজন দাস-মানসিকতার মানুষ সব সময় একটাই প্রশ্ন করবে “এখন আমি কি করবো ? আমার আর কিই বা করার আছে ?” 
  • আপনি যদি ঋণদায় গ্রস্থ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মোট উপার্জনের 10% আপনি সেভ করবেন,  ২০%   আপনি ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যবহার করবেন আর 70% আপনি আপনার লাইফ স্টাইল বা জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় খরচ হিসেবে ব্যবহার করবেন। 
  • কনসিসটেন্সি এবং ডিসিপ্লিন এর সাথে টাকা ব্যবহার করলে খুব দ্রুতই আপনার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এবং আগের ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে আপনি বুঝে ওঠার আগেই। 
  • আপনি যদি পরিশ্রমী হন আপনার সঠিক বন্ধুরা আপনার পরিশ্রমকে স্বাগত জানাবে। আপনি সব সময় মনে রাখবেন, আপনার কঠিন পরিশ্রমের অভ্যাস আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।