দ্যা লিডার , হু হ্যাড নো টাইটেল
( একজন লিডার যার কোন টাইটেল লাগে না )
এই বইটি লিখেছেন রবিন শর্মা। ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে কিভাবে আমরা সার্থকতা অর্জন করতে পারি সেই বৈশিষ্ট্যগুলো এই বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
লিডারশিপ কি মানুষ অর্জন করতে পারে নাকি জন্ম থেকেই লিডার হয়ে জন্ম নেয় ? এই প্রশ্নের উত্তরে রবিন শর্মা যেটা বলেছেন সেটা হলঃ যেকোনো জন্ম নেওয়া ব্যক্তি লিডার হতে পারে। গড মানুষকে লিডার বানিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কোন না কোন জায়গায় নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের লিডারশিপ নিতে হয়। তার মানে আমরা প্রত্যেকেই আসলে লিডার।
যে ব্যক্তি নিজের কাজের দায়িত্ব নিজে নেয় এবং তার আশেপাশের টিমমেট যারা আছে তাদেরকে প্রতিনিয়ত ইন্সপায়ার করে, এদের প্রত্যেকের মাঝেই লিডারশীপের গুণটা রয়েছে। এই গুন গুলো দেখানোর জন্য কারো কোন চাকরির টাইটেল এর প্রয়োজন পড়ে না।
আমরা কোন চেয়ারে বসলাম অথবা ভালো কাজের প্রতিদানে আমরা কি পেলাম তার উপর লিডারশিপ নির্ভর করে না। লিডারশিপ নির্ভর করে কতটুকু দায়িত্ব নিয়ে আমরা কাজ করি এবং কতটা দক্ষতা আমাদের আচার-আচরণে প্রকাশ পায়। তাহলে এখন প্রশ্ন হলোঃ কিভাবে কোনো অফিসিয়াল টাইটেল ছাড়া আমরা লিডারশিপ অর্জন করতে পারি?
লিডারশিপের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রতিনিয়ত ইনোভেশন এর দিকে খেয়াল রাখা
টাইটেল ছাড়া লিডার হতে চাইলে প্রতিদিন আমাদের নিজেদেরকে একটা প্রশ্ন করতে হবে। সেটা হলোঃ আজকে আমি আমার কোন কাজটাকে ইমপ্রুভ করব ? নিজেকে মধ্যম সারিতে রাখা যাবে না। এটা খুব খারাপ একটা ট্র্যাপ । অ্যাভারেজ মানুষ একটা কাজ যেভাবে করে, আমিও যদি সেটা এভারেজ মানুষের মতই করি তাহলে আমি কখনোই লিডার হতে পারব না । আমরা যদি প্রতিদিনের একই কাজ একই উপায়ে করি, কোন আপগ্রেডেশন না থাকে, তাহলে একই ধরনের রেজাল্ট আমরা পাব।
একই চেষ্টা = একই রেজাল্ট
অতএব আমাদেরকে চেষ্টার মধ্যে কিছু একটা ইনোভেশন আনতে হবে।
টাইটেল ছাড়া লিডারশিপের জন্য আমাদের নিজস্ব কাজের উপর মাস্টারি অর্জন করতে হবে
কমেডিয়ান ষ্টিভ মার্টিন একটা কথা বলেছিলেন, ” নিজের কাজে এতটাই ভালো হও, যেন অন্যরা তোমাকে অগ্রাহ্য করতে না পারে ” ।
রবিন শর্মার ভাষ্য মতে, আমাদের যে কাজ করতে ভালো লাগে সেই কাজে আমাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা হতে হবে। বেস্ট হতে হবে। নিজের কাজে বেস্ট হওয়ার জন্য প্রথমে যে কাজটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, নিজের কাজের কোয়ালিটির ব্যাপারে নিজের এক্সপেক্টেশনকে উপরে তুলতে হবে। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে আমার কাজটাই পৃথিবীর সেরা কাজ হয়েছে। এটা করার জন্য আমাদের যত চেষ্টা করার প্রয়োজন তত চেষ্টাই আমরা করব।এভারেজ মানুষজন, যেকোনো কঠিন কাজ করার পর সাথে সাথে এর প্রতিদান চায়। কিন্তু যে ব্যক্তি লিডার হতে চায়, তাকে মনে রাখতে হবেঃ যেকোন কাজের মাস্টারি অর্জন করতে হলে প্রচন্ড ধৈর্য সহকারে সময় দিতে হয় এবং চেষ্টা করে যেতে হয়। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই চেষ্টার ব্রত পালন করেই একজন ব্যাক্তি মাস্টার হয়ে থাকেন। অন্য কোন উপায়ে মাস্টারি অর্জন করার কোন ফর্মুলা নেই। অনেকেই খুব ভালো ভালো আইডিয়া দিতে পারে। কিন্তু একজন মাস্টার তখনই মাস্টার হন যখন সে ওই আইডিয়ার পেছনে দিনের পর দিন শ্রম এবং সাহস নিয়ে লেগে থাকার যে ধৈর্য সেটা দেখান। আমাদেরকে মাস্টারি অর্জন করার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে আমরা টাইটেল ছাড়া লিডারশিপের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবো।
টাইটেল ছাড়া লিডারশিপের জন্য আমাদের অকৃত্রিম এবং খাঁটি হতে হবে
আপনি যেটা নিজের ভেতরে অনুভব করেন সেটা যদি মুখে বলতে পারেন তাহলে আপনার অকৃত্বিমতা বা আপনার খাঁটি হবার নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হয়। আপনি যখন আপনার অনুভূতিকে সঠিকভাবে, অথেন্টিকভাবে ব্যাখ্যা করবেন, এবং সে অনুযায়ী কাজ করেবেন, তখন আপনার টিমের বাকি সদস্যরাও নিজেকে অথেন্টিকভাবে আপনার সামনে প্রকাশ করতে সাহস পাবে। এই অথেন্টিসিটি টিমের ভেতরে নিজেদের প্রতি নিজেদের বিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। তখন টিমের প্রত্যেক মেম্বার খুব রিলাক্স থেকে নিজেদের ভেতর নিজেরা কথা বলতে পারে, যোগাযোগ করতে পারে। তখন টিমটা হয়ে ওঠে অসাধারণ।
অদম্য সাহস থাকতে হবে কিন্তু !
টাইটেল ছাড়া লিডার হতে চাইলে অবশ্যই নিজের ভেতরে গাটস ( সাহস ) থাকতে হবে, টাফনেস থাকতে হবে। নিজের ভিশন- এর ব্যাপারে পেশনেট থাকতে হবে, খুব কঠিন কমিটমেন্ট থাকতে হবে। এই কমিটমেন্ট এর জায়গায় কোন ছাড় দেয়া চলবে না। নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভরসা রেখে সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
মূল্যবোধকে আকড়ে ধরে রাখতে হবে
দুর্ভাগ্যবশতই পুরো পৃথিবীতে অধিকাংশ ব্যবসা ই গলাকাটা ভাবে টাকা কামাতে চায় এবং এখানে মূল্যবোধকে তারা যথার্থ সম্মান করে না। অনেক লিডাররাও এটাকে পাশ কেটে যায়। তারা নিজেদের মূল্যবোধকে ব্যবসার মূল্যবোধের কাছে হারিয়ে ফেলে। তারা শুধুমাত্র তাদের নিজেদের চিন্তা করে এবং ব্যবসায় বেশি টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে কাজে লেগে যায়। লেখক রবিন শর্মার মতে, নিজের মূল্যবোধকে ধরে রেখে এবং নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে কাজ করতে পারা খুবই দামী বিষয়। যে লিডারশিপে মূল্যবোধের চর্চা থাকে না সেই লিডারশিপ টা খুব সস্তা ধরনের লিডারশিপ হয়ে যায়।
কঠিন সময়কে আন্তরিকতার সাথে মোকাবেলা করা
সময় যত কঠিন হয় একজন লিডার ততো সলিড হয়। একজন লিডারকে মনে রাখতে হবে যে, সে যতটুকু কাজ করার প্ল্যান করেছে, আসলে তাকে সে কাজের থেকে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। এটা মাথায় রেখেই দিন শুরু করতে হবে। মানুষ এমনি এমনি সৌভাগ্যবান হয়ে যায় না। সৌভাগ্যবান হতে গেলে সৌভাগ্যবান হবার চেষ্টা থাকতে হয়। সময় যতই কঠিন হোক, আমাদের উচিত আন্তরিকতার সাথে একে অন্যের সাথে কথা বলা। বেশিরভাগ মানুষ ডিফিকাল্ট আলোচনা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। শত্রুতার ভয় অথবা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থেকে এ ধরনের দূরে থাকার অভ্যাস তৈরি হয় । একজন লিডার খুব আন্তরিকতার সাথে সঠিক ব্যাপারটি অনুভব করতে পারে এবং খুব স্পষ্টভাবে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। ফ্যান্টাসি এবং ডিলুশন থেকে দূরে থেকে রিয়েল ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা একজন লিডারের বৈশিষ্ট্য। টাইটেল ছাড়া যে লিডার হতে চাবে , তাকে খুব সিনসিয়ারলি কঠিন ব্যাপার গুলোতে আলোচনা করার সময় আন্তরিক থাকতে হবে এবং বাস্তবমুখী থাকতে হবে।
প্রত্যেকটা কঠিন চ্যালেঞ্জ একটা করে নতুন অপরচুনিটি তৈরি করে। এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে নিজের এবং আশেপাশের সব মানুষের অ্যাডভান্টেজ হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটা একজন লিডারকে চিন্তা করে বের করতে হবে। কঠিন সময়ে কিছু না করা একজন লিডারের জন্য সবচেয়ে খারাপ কাজ। লিডার কে চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতেই হবে। একজন লিডার ফেইল করলে সে সেখান থেকে শিখবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এজন্য টাইটেল বিহীন লিডার যে হতে চায় সে প্রতিদিন কিছু চ্যালেঞ্জ ওভারকাম করার আন্তরিক চেষ্টা থাকতে হবে।
কাজের প্রায়োরিটি সেট করা
আমরা খুব সহজেই আমাদের জীবনের মিশন, ভিশন, মূল্যবোধ এবং জীবনের গোল থেকে অমনোযোগী হয়ে যেতে পারি। একজন টাইটেল ছাড়া লিডার নিজের মিশন, ভিশন, মূল্যবোধ এবং জীবনের গোল এই ব্যাপার গুলোর উপর ভিত্তি করে নিজের কাজকে প্রায়রিটাইজ করে। সারাদিনে অনেক কাজ থাকতে পারে। কোন কাজটা আগে করতে হবে সেটা নির্ভর করবে জীবনের মিশন, ভিশন, মূল্যবোধ, গোল এইগুলাতে সেই কাজটার ইম্প্যাক্ট কতটুকু পরবে তার উপর ভিত্তি করে। প্রায়োরিটির উপর ভিত্তি করে একটার পর একটা কাজ করতে হবে।
রিঅ্যাক্ট না করে আমাদেরকে রেসপন্সিভ হতে হবে
আমরা অনেকেই দেখি, যখন কোন চ্যালেঞ্জ সামনে আসে তখন তারা প্যানিকড হয়ে যায়। এবং তাদের মূল্যবান কাজের সময় নষ্ট করে ফেলে। চ্যালেঞ্জ সামনে আসার সাথে সাথে তাদের সমস্ত কাজকর্ম উলটপালট হয়ে যায় , এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা দুশ্চিন্তায় ডুবে যায় । এটাকে বলে রিএকশন । যখনই আপনি রিয়েকশন দেখাবেন তখনই আপনি ওই প্রবলেমের একটা অংশে পরিণত হবেন। সাইকেল ছাড়া লিডার হতে গেলে আপনাকে প্রবলেম নয় বরং সমাধানের অংশে কান্ট্রিবিউট করতে হবে। আপনাকে প্রবলেমটার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এবং রেসপন্সিবল হয়ে সেই প্রবলেম কে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে ।
সহকর্মীকে উৎসাহ দেয়া
একজন সহকর্মী যখন খুব কঠিন কোন চ্যালেঞ্জ এর ভেতর দিয়ে যায় এবং সে তার সম্পূর্ণ চেষ্টা করতে থাকে তখন তাকে তার কাজের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া এবং প্রতিনিয়ত আন্তরিকতার সাথে খোঁজখবর নেয়া একজন লিডারের কাজ।
সম্পর্ক যত গভীর হবে , লিডারশিপ তত ষ্ট্রং হবে
টাইটেল ছাড়া আপনি কার লিডার হবেন? মানুষের, তাই না ? এর মানে হচ্ছে আপনাকে মানুষের সাথে ভালোভাবে কানেক্টেড থাকতে হবে। আমাদেরকে সবার সাথে এক্সেপশনালি ভালো ব্যবহার করতে হবে। সবাইকে খুব ভালোভাবে ট্রিট করতে হবে। ক্ষমতা দিয়ে কাজ করানো আগে একজন ব্যক্তির হৃদয়ে স্থান নেয়ার কাজটা টাইটেল বিহীন লিডারকে নিতে হবে।
আসলে একজন মানুষকে যে পরিমাণ কাজের জন্য পেমেন্ট করা হয় তার হাতে নরমালি একটু বেশি পরিমাণ কাজই হাতে থাকে। কোম্পানিরা একজনের কম্পেন্সেশন ওই ব্যক্তির কাজের বাজার মূল্যের সরাসরি লাভের উপর সেট করে থাকে। লিডারদেরকে এজন্য তার দলের অথবা আশেপাশের সকলকে হৃদয় দিয়ে সাপোর্ট করতে হয়। আন্তরিকতার স্বচ্ছতা থাকলে সুসম্পর্ক তৈরিতে কোন বাধা থাকে না। অন্য কলিগের বিপদে পাশে দাঁড়ানোটা টাইটেল বিহীন লিডারদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। টাইটেল বিহীন লিডারদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অন্য মানুষকে বুঝতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের বিপদ অনুভব করতে হবে, চেষ্টা করতে হবে তাদের সব কথা শোনার ।
কাজের মাঝে মজা খুঁজে পাওয়া
আমরা সবসময়ই ভাবি কাজ মানেই খুব সিরিয়াস মুডে থাকতে হবে । আমরা ভয় পাই যে কাজের মাঝে হাসি তামাশার জন্য ব্রেক নিলে কাজের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়; কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক না। গবেষণায় দেখা গেছে ফ্রেন্ডলি পরিবেশে মানুষ যখন রিলাক্স থাকে তখন প্রোডাক্টিভিটি খুব ভালো থাকে। তাই সব সময় কাজের মাঝে মজা পাওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। তখন কাজের পরিমাণ যতই বেশি হোক না কেনো , চ্যালেঞ্জ যতই গভীর হোক না কেন, সেটা মোকাবেলা করা খুব সহজ হয়ে যাবে।
একজন ভালো লিডার হতে হলে প্রথমে তাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে
প্রথমে নিজেই নিজের লিডার হতে হবে। নিজে যদি একশন এর মাধ্যমে উদাহরণ তৈরি না করতে পারি তাহলে কখনোই অন্যের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারবোনা। নিজের পার্সোনাল লাইফে নিজের লিডারশিপ মেনেজ করা হচ্ছে সকল দুর্দান্ত লিডারদের ডি, এন, এ – তে লেখা প্রধান বৈশিষ্ট্য ।
দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে
একটি ব্যবসায় জড়িত সকল ধরনের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই ওই ব্যবসার মূল রেজাল্ট। আমরা যা যা কাজ করি সবগুলো কাজই আমাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। তার মানে আমাদের চিন্তা আমাদের বিহেভিয়ার এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেজন্য আমাদেরকে দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায় স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে। একজন টাইটেল হীন লিডার স্বচ্ছ দৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া বাধ্যতামূল।
স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে
ফ্যামিলিকে সময় দিতে হবে
লাইফস্টাইলে পজেটিভ ইম্প্রুভমেন্ট আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে