আমরা সারাজীবনে জীবনে নতুন কিছু করার জন্য কতবার রুটিন বানাই সেটা হিসাব করা মুশকিল। যেমনঃ যখন স্কুল-কলেজের ছাত্র ছিলাম, মনে হয় প্রত্যেক মাসেই রুটিন করেছি আর নিজেকে বুঝিয়েছি ইনশাল্লাহ কাল থেকেই এই রুটিন ফলো করবো আর সব কিছু শেষ করে ফেলবো, দুনিয়া উল্টিয়ে দিবো 😀 স্কুল কলেজ ভার্সিটি শেষ হয়েছে আরো দুই-আড়াই দশক আগে কিন্তু বার বার রুটিন করে সেই রুটিন ফলো না করার অভ্যাস এখনো যায় নি। তাহলে প্রথম বাধা কোথায় ? কেনো সেই রুটিন ফলো করতে সমস্যা হচ্ছে ?

নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে বার বার অনুসন্ধান করে যেটা দেখলাম, প্রথম বাধা হচ্ছে ঘুমের প্রতি নিজের কন্ট্রোল না থাকা। আমাদের সবার রুটিনেই সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার একটা ব্যাপার থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা রুটিনটা শুরুতেই নষ্ট করি সকালে রুটিনের সময়মত ঘুম থেকে না উঠে। যেহেতু সকালের প্রথম কাজটাই রুটিন অনুযায়ী হয়নি, তাই বাকী কাজ গুলোর-ও গুরুত্ব হারায়। ফলাফল, রুটিনটি আবারো ফেইল করে ফেলে।

রাতের ঘুম অতি গুরুত্বপুর্ন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের অনেকের রাতে জাগার বদ অভ্যাস আছে। এটা প্রথমত আপনাকে কিছু বড়সড় রোগব্যাধি ছাড়া তেমন কিছুই দিবে না। আপনি হয়তো ভাববেন খুব কিছু করে ফেলছেন রাত জেগে জেগে, আসলে ঘণ্টা করছেন। ভার্সিটির ছাত্র থাকাকালীন সময়ে রাত জেগে পড়তাম, তাই রাত জাগার অভ্যাস ছিলো । ক্যারিয়ারের শুরুতেও রাত জেগে কাজ করতাম। যেহেতু চাকরীর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফটওয়্যার ডেভেলাপমেন্ট করতাম তাই রাত জাগা ছিলো অতি প্রিয় কাজ। সাথে ভালো কিছু টাকাও আসতো। খুব ভালো একটা অজুহাত ছিলোঃ আমেরিকার কাজ করি, তাই বাংলাদেশের সাথে সময় মেলে না; এজন্য রাত জেগে কাজ করি। যেহেতু রুটি রুজির ব্যাপার, তাই রাত জাগাটা ইবাদতের মতো একটা ব্যাপার ! অতএব সকালে ওঠা অসম্ভব। তাই রুটিন করা শুরু করলাম এমনভাবে যেখানে দিন শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে ( হাস্যকর ) ! মাঝে মাঝে রাত জাগা এমন পর্যায়ে যেতো সকাল ৫ টায় ঘুমাতে যেতাম, তাই ৭টার রুটিন ফেইল করলো।

যখন চাকরির অর্ধযুগ হয়ে গেছে, অফিসের একজন সিনিয়র এমপ্লয়ি হিসেবে খুব দায়িত্বপুর্ন কিছু কাজে ব্যাস্ত থাকছি সবসময়। অফিসে যাই বেলা ১০ টায়, ফিরি রাত ২টা – ৩টার সময়। অফিসটা খুবই ভালো যত্নাত্তি করে। খাবার-দাবারের প্রবলেম নাই, আরামের প্রবলেম নাই, রাত হয়ে গেলে আবার গাড়ী দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেয়, কয়েকমাস পরে পরে চিকনে বেতনের সাথে স্পট বোনাস ঢুকে যায়। ফলাফলঃ রাত জাগা ছাড়া যাচ্ছিলো না, রাত ২-৩টায় বাসায় ফিরে নিশ্চয়ই সকাল ৫টায় রুটিন ধরা সম্ভব নয়। ডেইলি সকাল ৯-১০টায় উঠতাম, গোসল করে রেডি হয়ে বনানী “রসনা বিলাস” রেস্তোরায় গরম পরোটা, ডিম পোচ, সবজী/চিকেন ফ্রাই/কলিজাভুনা/চিকেন স্টু আর চা ! স্বর্গ সুখে দিন কাটছিলো , কিন্তু রুটিন ফলো করে ঘুম থেকে উঠতে পারছিলাম না!

বিয়ের পরে বাচ্চারা রাত জাগানো শুরু করলো। কিচ্ছু করার নাই (!) আবার রুটিন ফেইল ।

অনুসিদ্ধান্তঃ
যেহেতু রাতে রুটিন মাফিক সময় ধরে ঘুমাতে পারছি না, তাই রুটিনে একটা ছোট্ট হ্যাক করেছি। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরে পরে ঘুমের একটা সুযোগ তৈরি করেছি। ৩০ মিনিট করে ছোট্ট দুইটা ন্যাপ নেয়া গেলে রাতের ঘুম বেশ ভালোভাবেই কভার হয়। তবে রাতে অবশ্যই ১১:৪৫ এর ভেতরে শুতে চলে যাই, ঘুম হোক আর না হোক সকাল ৪:৫৯ – এ ঘুম থেকে উঠে পরি। একটা হিট এক্সারসাইজ করে ফেলি, গোসল দেই, এরপর নামাজ পরে ফেলি, ঘুমের গুষ্ঠি উদ্ধার হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে ২০-২৫ মিনিটের একটা মেডিটেশন করতে চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলান দেই, ১১:৩০ এ ঘড়িতে বেল দেয়া আছে, উঠে চোখে মুখে পানি দেই, পানি খাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ বিকাল ৩টা পর্যন্ত এনার্জি, মাইন্ডসেট সব টন টনা থাকে !